১৩ জেলায় আকস্মিক বন্যা: পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ
ডেস্ক নিউজ :: দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ ১৩টি জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। বন্যায় ডুবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে ফেনী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, শনিবারের মধ্যে বেশির ভাগ জেলায় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
এদিকে ত্রিপুরার দুম্বুর হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট (দুম্বুর গেট) খুলে দিয়েছে ভারত সরকার। এর প্রভাবে বাংলাদেশ অংশে দ্রুতগতিতে পানি বাড়ছে বলে মনে করছে সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
বন্যায় আক্রান্ত জেলার তালিকায় রয়েছে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বরিশাল, রাঙ্গামাটি, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। এসব জেলার লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে ছুটছে। অনেক স্কুল-কলেজকে এরই মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানুষকে উদ্ধারে সহযোগিতা করছে। বন্যার্তদের জন্য জরুরি সেবা চালু করেছে ফায়ার সার্ভিস।
গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী রেজা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে। কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, মুহুরী, ফেনী ও হালদা নদীর পানি সাতটি স্টেশনে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপ অব্যাহত থাকায় নিম্নাঞ্চলের আরো কিছু জেলায় বন্যার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান গণমাধ্যমে বলেন, ‘মোটামুটি তিনদিনের মধ্যে অনেক জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
একাধিক বিদেশী সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যায় সেখানে গতকাল পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। এমন পরিস্থিতিতে খুলে দেয়া হয়েছে ত্রিপুরার ‘ডুম্বুর গেট’। ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতী জেলা প্রশাসক তরিৎ কান্তি চাকমা তার দাপ্তরিক ‘এক্স’ অ্যাকাউন্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল সন্ধ্যায় জানায়, খোয়াই, ধলাই, মুহুরী, হালদা ও কুশিয়ারার পানি সমতলে বাড়ছে।
বন্যা আক্রান্ত ১৩ জেলার মধ্যে সবেচয়ে নাজুক পরিস্থিতি ফেনীতে। ছাগলনাইয়া উপজেলার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে আজিজুর রহমান রিজভী নামের এক স্বেচ্ছাসেবক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অনেক এলাকায় ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। এসব এলাকায় কোনো উদ্ধারকাজ করা যাচ্ছে না। স্রোতের তীব্রতা অনেক। হেলিকপ্টার ছাড়া উদ্ধারকাজ সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ত্রাণ বিতরণের চেয়ে মানুষকে উদ্ধার করা বেশি জরুরি। এখানে সেনাবাহিনী ছাড়া তেমন কেউ নেই। আমরা স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত থাকলেও পরিস্থিতির কারণে কাজ শুরু করতে পারছি না। আমার বাসা ফেনী সদরে, সেখানেও গলা পরিমাণ পানি।’
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে এক তরুণের মৃত্যু হয়। তার নাম মো. রাজু। তিনি সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুর পশ্চিমমাথা এলাকার মিজানুর রহমানের ছেলে।
সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জে বেশকিছু এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সেখানে পরিস্থিতি আরো অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলার খোয়াই ও কুশিয়ারার পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে রাত জেগে কাজ করেছে তারা। এর মধ্যে গত বন্যায় ভেঙে পড়া বাঁধের জালালাবাদ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের সব স্কুল ও মাদ্রাসা পরিণত হয়েছে বন্যার আশ্রয় কেন্দ্রে। ওই এলাকার স্বেচ্ছাসেবক জাকির হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ পরিবার স্কুল-মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছে। আমরা পানিবন্দি অনেক মানুষকে উদ্ধার করে নিয়ে আসছি, অনেকে নিজ উদ্যোগে আসছে। আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকায় খাবারের সংকট দেখা দিতে পারে।’
এদিকে টানা চারদিনের বৃষ্টিতে চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে এ মৌসুমে চতুর্থবারের মতো বন্যা দেখা দিয়েছে খাগড়াছড়ি জেলায়। জেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। বাঘাইহাট এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় সাজেকে আটকা পড়েছে দুই শতাধিক পর্যটক। খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা ও মেরুং ইউনিয়নের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দীঘিনালা-লংগদু সড়কের হেডকোয়ার্টার এলাকা প্লাবিত হওয়ায় লংগদুর সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। খাগড়াছড়ি পৌরসভার প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা গণমাধ্যমকে জানান, বন্যাদুর্গতদের জন্য ১২ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ২ হাজার ৫৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
দেশের বন্যাকবলিত এলাকার উদ্ধার কার্যক্রম বিষয়ে যেকোনো সেবা গ্রহণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের হটলাইন নম্বর (১০২) ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নিয়মিত ফোন নম্বর (০২২২৩৩৫৫৫৫৫) চালু থাকবে। পাশাপাশি মনিটরিং সেলে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য (০১৭১৩-০৩৮১৮১) ফোন করা যাবে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করেও সহযোগিতা পাওয়া যাবে ফায়ার সার্ভিসের।
বন্যাকবলিত জেলাগুলোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব কর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নিয়ন্ত্রণ কক্ষও খুলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ০১৩১৮২৩৪৯৬২, ০১৭৬৫৪০৫৫৭৬, ০১৫৫৯৭২৮১৫৮ ও ০১৬৭৪৩৫৬২০৮ নম্বরে ফোন করে সহযোগিতা চাওয়া যাবে।
পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে আশপাশের অন্তত ৩০টি গ্রামে। অস্থায়ী সেতু ভেঙে বন্ধ রয়েছে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল। এছাড়া পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার (২৫) নামে গর্ভবতী নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বীরচন্দ্রপুর গ্রামের পারভেজ মিয়ার স্ত্রী।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলের ১২টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যার কারণে লক্ষ্মীপুর সদর, রামগতি, কমলনগর, রায়পুর উপজেলার উপকূলীয় এলাকার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে শহরেও। ডুবে গেছে মাছের ঘের ও পুকুর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বীজতলা।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার। ডুবে গেছে মাছের ঘের। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে ১৭ হেক্টর আমন বীজতলা ও ১২ হেক্টর সবজিখেত। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে উপজেলার হিঙ্গুলী, করেরহাট, বারইয়ারহাট পৌরসভা, জোরারগঞ্জ, ওসমানপুর, ইছাখালী, কাটাছড়া, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওয়াহেদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়। সূত্র: বণিকবার্তা
সম্পর্কিত সংবাদ
কয়রায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালন
কয়রা(খুলনা)প্রতিনিধি :: কয়রা উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্ম বার্ষিকী পালন উপলক্ষে দোয়াবিস্তারিত…
বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরো’র কয়রা উপজেলা কমিটি অনুমোদন
কয়রা(খুলনা)প্রতিনিধি :: বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরো’র খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা শাখা কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংগঠনেরবিস্তারিত…