ফারুক আহমেদ ইতিহাস গড়েই বিসিবিতে ফিরলেন

নিউজ ডেস্ক ::২০১৬ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সদ্য সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে প্রধান নির্বাচকের পদ ছাড়েন ফারুক আহমেদ। ঠিক ৮ বছর পর সেই পাপনের জায়গায় বিসিবির ১৫তম সভাপতি হলেন এই সাবেক ক্রিকেটার। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম সাবেক ক্রিকেটার যিনি বোর্ডের সর্বোচ্চ আসনে বসলেন। ইতিহাস গড়ে সভাপতি হওয়া ফারুক কাজ দিয়েও ইতিহাসই গড়তে চান।

যে কারণে গতকাল প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেটকেই প্রাধান্য দেয়ার কথা বললেন বার বার।
গত ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালান শেখ হাসিনা। পরের দিন ভেঙে দেওয়া হয় জাতীয় সংসদ। সেদিন থেকেই লাপাত্তা ছিলেন বিসিবি সভাপতি ও এমপি পাপন। এরপর গতকাল বিসিবির জরুরী সভায় তিনি পদত্যাগ করেন। তার স্থলাভিষিক্ত হন ফারুক।

ক্রিকেটে ফারুকের পথচলা প্রায় অর্ধশত বছরের। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানান, ক্রিকেটার ও নির্বাচক মিলিয়ে ৪২ বছর ধরে আছেন ক্রিকেটের সঙ্গে।

বিজ্ঞাপন

খেলোয়াড়ি জীবনে অলরাউন্ডারের ভূমিকায় থাকলেও ব্যাটার হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন ফারুক আহমেদ। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন প্রায় ১৫ বছর। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামে পাকিস্তানের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ফারুকের। ১৯৯৩ আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে সাতটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ফারুক। যার মধ্যে সবশেষ দেশের জার্সিতে তাকে দেখা গেছে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে। ২০০১ সালে খেলেছেন সর্বশেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। 

খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার  ২ বছরের মাথায় প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পান ফারুক। দেশের ইতিহাসে এই মুহূর্তে অন্যতম সেরা ক্রিকেটাররা তার হাত ধরেই উঠে এসেছেন প্রথম মেয়াদে। ২০০৫ সালে খালেদ মাসুদ পাইলটের জায়গায় ১৮ বছরের তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মুশফিকুর রহীমকে সুযোগ দেন ফারুক আহমেদ। এছাড়া সাকিব আল হাসান, যাকে মানা হয় দেশের ইতিহাসে সেরা ক্রিকেটার তিনিও ফারুকের খুঁজে আনা প্রতিভা। এছাড়া ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১৮ বছরের তামিম ইকবালকেও তিনিই সুযোগ দেন জাতীয় দলে।

এই তিনজনই পরবর্তীতে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরাদের কাতারে জায়গা করে নেন। দেশের ক্রিকেটে প্রচলিত আছে, নির্বাচক হিসেবে ফারুকের চোখ একদম জহুরীর মতো। অবশ্য কাজেও সেটাই দেখা যায়। ২০১২ সালে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে পরের বছর ফারুক আহমেদকে প্রধান নির্বাচক হিসেবে ফিরিয়ে আনেন নাজমুল হাসান পাপন।

এই মেয়াদে তার হাতে জাতীয় দলে সুযোগ পান সোহাগ গাজীর মতো ক্রিকেটার। তবে দ্বিতীয় মেয়াদটা ফারুকের জন্য সুখকর হয়নি। ২০১৬ সালে বিসিবি সভাপতি পাপন হুট করে বিতর্কিত এক দ্বিস্তরবিশিষ্ট নির্বাচক প্যানেলের উদ্ভব ঘটান। এই নির্বাচক প্যানেলের দুই স্তরের মধ্যবর্তী সত্তা হিসেবে থাকবেন পাপন নিজেই। এতে প্রধান নির্বাচকের ক্ষমতা সীমিত করা হয় যেটা ঐ সময়ের প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের পছন্দ হয়নি।

এছাড়া প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে তার মতবিরোধও দেখা দেয়। ফলে ফারুককে একরকম বাধ্য হয়েই তখন বিসিবি থেকে পদত্যাগ করে চলে যেতে হয়। ফারুককে বিসিবিতে এনেছিলেন পাপনই, আবার পাপনেরই উদ্ভট নির্বাচক প্যানেল তত্ত্বের কারণে তাকে চলে যেতে হয়। ফারুককে এরপর আর কখনও বিসিবির কোনো দায়িত্বে দেখা যায়নি।

৮ বছরের ব্যবধানে সেই পাপনের  উত্তরসূরী হয়েই বোর্ডে এলেন ৫৮ বছর বয়সী সাবেক ক্রিকেটার। ক্রিকেট জীবনে রক্তাক্ত মাথা নিয়ে ব্যাটিং করে আলোচনায় আসেন ফারুক আহমেদ। সেদিন ব্যাট হাতে বুঝিয়েছিলেন, ক্রিকেট তার আছে শুধু খেলা নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে নির্বাচক হয়েছেন সেখানেও সাফল্য পেয়েছেন। বাধা পেয়েছেন প্রতিবাদ করেছেন, পদের মায়া করেননি ছেড়ে দিয়েছেন প্রধান নির্বাচকের মতো লোভনীয় পদ।

দেশের ক্রিকেটে স্পষ্টবাদী হিসেবে পরিচিতি আছে ফারুকের। গতকাল সংবাদ সম্মেলনেও যেন তার ছাপ রাখেন তিনি। সাংবাদিকের প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরুর আগে স্বাগত বক্তব্যেই স্পষ্ট করে বললেন সভাপতি হিসবে কি করতে চান, কোথায় কোথায় পরিবর্তন আনতে চান। সরকার পতনের পর ক্রিকেট বোর্ডে পরিবর্তন আসবে এটা অনুমেয় ছিল।

তবে ফারুক আহমেদ সভাপতি হবেন এটা শুরুর দিকে কারও মুখে শোনা যায়নি। পাপন পদত্যাগে সম্মত এমন খবর প্রকাশের পর জানা যায়, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ফারুক অবশ্য শুরুতে জানান, বোর্ডে যে কোনো বিভাগেই কাজ করতে আগ্রহী তিনি।

বিসিবির গঠনতন্ত্র মেনে সভাপতি নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে, আগে পরিচালক হতে হবে। তারপর পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হবে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কোটায় পরিচালক হন তিনি। আর সাবেক অধিনায়ক হিসেবে আগেই বিসিবির কাউন্সিলরশিপ ছিল ফারুকের। এরপর সভায় উপস্থিত বাকি পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ক্রিকেট বোর্ডে অবশ্য সাবেক অধিনায়কের সংখ্যাটা কম নয়।

টেস্ট অভিষেকের অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়, আকরাম খান ও খালেদ মাহমুদ সুজন পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন গত তিন মেয়াদ থেকেই। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের প্রথম অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ২০০৭ সালে অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ডের পরিচালক ছিলেন।

বর্তমানে তিনি নির্বাচক প্যানেলের চেয়ারম্যান। অন্য সাবেক অধিনায়কদের মধ্যে হাবিবুল বাশার সুমন, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, শাহরিয়ার নাফিস তারা ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে কাজ করলেও পরিচালক হননি। সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক।



« (পূর্ববর্তী সংবাদ)



সম্পর্কিত সংবাদ

  • ‘ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখার করার জন্য মুখিয়ে ছিলাম’
  • বিসিবি থেকে পদত্যাগ করলেন সুজন
  • এরচেয়ে খারাপ শুরু আর হয়নি সেলেসাওদের
  • বাংলাদেশের যে তিন ক্রিকেটার এবার ভারতের নজরে
  • এবার জিম আফ্রো টি-টেন টুর্নামেন্টে দল পেলেন বিজয়
  • ভারত বনাম বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ : শচীন তেন্ডুলকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ
  • দাবা অলিম্পিয়াডে দুই বোন ওয়ালিজা ও ওয়াদিফা
  • বাংলাদেশের প্রধান কোচ হতে আগ্রহী মুশতাক আহমেদ