মৎস্য খামার ভেসে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক হাজার চাষী সাতক্ষীরার তালায়

তালা প্রতিনিধি :: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে ভেসে গেছে মৎস্য খামার। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার খামারী। সেই সাথে ঘেরের বেড়িবাঁধে সবজি চাষাবাদ ব্যাহত হয়েছে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় কোটি টাকার উপরে।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার অন্যতম আয়ের উৎস এই সকল মংস্য খামার। যা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই দিন দিন এই খাত হুমকির মুখে। নেই পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা,আর্থিকভাবে দেওয়া হয় না কোন সহযোগিতা,অন্যদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস মাইকিং করে জনসাধারণকে অবহিত করা হয় না। সরকারি ভাবে উৎসাহিত করা হয় না আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।
সরেজমিনে দেখা গেছে,উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের জুলাখালি,খোবরাখালী,বালিয়াদহ বিল, খলিশখালী ইউনিয়নের চোমরখালী,খৈ ডাঙ্গা,মেঠে ভাঙা,গাজার বিল,জালালপুর ইউনিয়নের কৃষকাটী,আটঘোরিয়া,জেঠুয়ার বিল,খলিলনগর ইউনিয়নের কামারাবাদ,চাঁপান ঘাট,সত্যিই মারি,সোনামুড়া,বেনা কুড়ি বিল সহ কুমিরা,খেশরা,নগরঘাটা ইউনিয়নের বিল তিনদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে ভেসে একাকার হয়েছে। অন্যদিকে কবোতাক্ষ,বেত্রনা,শালিকা সহ অন্যান্য  নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সরুলিয়া ইউনিয়নের তরুণ উদোগ্যতা এ আর বি এগ্রোর ফার্মের আজিজুল হক,আব্দুল্লাহ আল ফারুক,রায়হান আওরঙ্গী ও মাসুদ রানা বলেন,পাইলট প্রকল্পের আওতায় মোলা মাছ চাষাবাদ করছি আমরা। ভারীবৃষ্টির কারণে আমাদের এই প্রকল্প ভেসে গেছে। ৩০ শতাংশ পুকুরে ৫ লক্ষ মোলা মাছ সহ দেড় লাখ টেংরা,পাঁচ হাজার তারা বাইন ও একই পরিমাণে শিং মাছ দেওয়া হয়ে ছিল। তিন মাসের এই প্রকল্পে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মাছ আহরণের করবো। কিন্তু টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে ভেসে গেছে মৎস্য খামার।
প্রকল্প বাস্তবায়নে আনুমানিক খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। ভেসে না গেলে আমাদের খরচ বাদে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ থাকতো বলছিলেন প্রকল্পের অন্যতম উদোগ্যতা রায়হান আওরঙ্গী।

 

 

অন্যদিকে কুমিরা ইউনিয়নের মংস্য চাষী নাজমুল হাসান বলেন, মংস্য খামারের আইলে প্রতি বছর ক্ষীরায়,করোল্লা,বরবটি বিক্রয় করে মৌসুমে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা বেচা বিক্রি করি। এবার দু,দফা ভারী বৃষ্টিপাতে অর্ধেক টাকা ওঠানো সম্ভব হয়নি। এই টাকা দিয়ে আমার সাত বিঘা খামারের জমির লিজের টাকা পরিশোধ করি। এবার কি করবো বুঝতে পারছি না? সেই সাথে খামার তলিয়ে আমি এখন দিশেহারা।
মাগুরা ইউনিয়নের বালিয়াদহ গ্রামের আর এক মংস্য চাষী দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা সাইফুল গল্দার বলেন,আমার ১৫ বিঘার মৎস্য খামার ভেসে গেছে। অপর একটি ৮ বিঘার মৎস্য খামার কোন রকমে নেট দিয়ে টিকেয়ে রেখেছি। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে সেটাও ভেসে যাবে। ফলে আমার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মত।
খলিলনগর ইউনিয়নের উতর নলতা গ্রামের মংস্য চাষী শেখ আবুল বাসার বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে সাধারণত বাগদা চিংড়ি চাষাবাদ হয়। গত এক দশকে এমন ভারী বৃষ্টিপাতে হয়নি। আমার ৩৫০ বিঘার মৎস্য খামার। একদিকে ভারী বৃষ্টিপাত অন্যদিকে চাঁপানঘাট খালের অতিরিক্ত জোয়ারের কারণে হুমকির মুখে খামার। এই অঞ্চলের মংস্য খামারের অতিরিক্ত পানি ভাঁটায় নেমে যায়। এবার টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে সকল এলাকার পানি নিচের দিকে নামতে পারছে না বলছিলেন অন্যতম বৃহৎ মংস্য খামারি শেখ আবুল বাশার।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আওতাধীন  সাতক্ষীরা আঞ্চলিক কার্যালয়ে থেকে জানা গেছে,গত শুক্রবার থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত ১৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ।
তালা উপজেলা জোষ্ঠ্য মংস্য কর্মকর্তা স্নিগ্ধা খাঁ বাবলী বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে ৯০৫ হেক্টর মংস্য খামার ভেসে গেছে। সেই সাথে অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে প্রাথমিক ভাবে  কোটি টাকার উপর ক্ষতিগ্রস্ত এই অঞ্চলের সাধারণ খামারীরা বলেন এই কর্মকর্তা।তালা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ফেরিভাইড ফেসবুকের এক নির্দেশনা দেখা যায়,বিভিন্ন খাল,  বিল বা নালায় যে বা যারা অবৈধ নেটপাটা কিংবা কালভার্টের সামনে বাঁধ দিয়ে পানি অপসারণে বাধা সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে দ্রুত এগুলো সরিয়ে নিতে অনুরোধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।