চাহিদার তুলনায় সারের বরাদ্দ কম

আনুলিয়া ইউনিয়নে ১০৩২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ, ১৪৩১ হেক্টরে মৎস্য চাষ হবে

★ মৎস্য ঘের প্রস্তুতে সার মিলছে না
★ রাস্তার দুরাবস্থায় সার নিয়ে ট্রাক যেতে আপত্তি
জি এম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি :: আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নে চলতি বোরো মৌসুমে ১০৩২ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে সারের চাহিদা মত বরাদ্দ না থাকায় চাষ কাজে বাধা প্রাপ্ত হচ্ছেন কৃষকরা। মৎস্য চাষীরা প্রয়োজনীয় সার পেতে এলাকা ছেড়ে বাইরে গিয়েও সার মেলাতে পারছেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আনুলিয়া ইউনিয়ন ২৮৬৫ হেক্টর জমি নিয়ে অবস্থিত। যার মধ্যে আবাদ যোগ্য জমির পরিমান ২২৯০ হেক্টর। এর মধ্যে বোরো মৌসুমে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে ১০৩২ হেক্টর জমিতে। জমি আবাদের শুরুতে প্রতি বিঘা জমিতে টিএসপি ১০/১২ কেজি করে, ইউরিয়া ৪/৫ কেজি করে, পটাশ ৭/৮ কেজি করে, জিপসাম ৫ কেজি করে ও দস্তা ১ কেজি করে ব্যবহার করতে হয়। হিসাবে যে পরিমাণ সারের প্রয়োজন হয় তার থেকে অনেক কম সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ঐ ইউনিয়নের জন্য। ফলে কষ্টকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে কৃষকদের। এখন চলছে ফেব্রুয়ারী মাস। ধান রোপনের ১৫ দিনের মধ্যে চাপান সার ব্যবহার করার কথা। এখন চলছে চাপান সার ব্যবহারের সময়। এ মাসের মধ্যে চাপান সার প্রয়োগ করতে হবে। চাপান সার প্রতি বিঘা জমিতে টিএসপি ৭ কেজি করে, ইউরিয়া ১০ কেজি করে ও পটাশ দিতে হবে ৫ কেজি করে। অথচ আনুলিয়া ইউনিয়নে ১০৩২ হেক্টর জমির বিপরীতে ফেব্রুয়ারী মাসে বরাদ্দ যথেষ্ট হয়নি। এছাড়া এই ইউনিয়নে ১৪৩১ হেক্টর জমিতে মৎস্য চাষ হয়ে থাকে। মৎস্য ঘেরের জন্য ন্যুনতম বিঘা প্রতি ১০ কেজি টিএসপি, ১০ কেজি পটাশ, ১৫/২০ কেজি ইউরিয়া ও ১ কেজি করে দস্তা সার লাগবে। অথচ আশ্চার্যজনক হলেও সত্য যে, মৎস্য ঘেরের জন্য কোন সার বরাদ্দ নাই। সবমিলে বোরো আবাদ ও মৎস্য ঘের প্রসেসিং এর জন্য সারের চাহিদা পুরনে ডিলাররা হিমশিম খেতে শুরু করেছে। ডিলাররা বোরো আবাদের চাষীদের চাহিদা মেটাতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে মৎস্য চাষীদের সারের চাহিদা পুরন করবে কি ভাবে?
বিএডিসি সার ডিলার এর বরাদ্দ নগন্য, আর বিসিআইসি সার ডিলার এখানে একজন; মেসার্স সরদার ভ্যারাইটিস স্টোর। সত্ত্বাধিকারী মোঃ নূরুল আলম জানান, ফেব্রুয়ারী মাসে তার বরাদ্দ এসেছে ইউরিয়া ৪৭ টন, টিএসপি আড়াই টন, ডিএপি সাড়ে ১৫ টন, এমওপি ৮ টন। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তিনি বলেন, আনুলিয়ায় সার আনতে পরিবহন খরচ অনেক বেশী হয়ে যায়, কিন্তু তার পরও আমরা নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রয় করে যাচ্ছি।
ধান চাষী বিছট গ্রামের আঃ মজিদের ছেলে সাইফুল ইসলাম জানান, আমি ৭ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। আজকে ১ বস্তা ১০ কেজি ইউরিয়া ২৭ টাকা কেজি দরে, ১২ কেজি এমওপি ২০ টাকা কেজি ও ৫ কেজি এমওপি ২১ টাকা কেজি দরে ক্রয় করেছি। গরালী গ্রামের আমজেদ সানার ছেলে আলমগীর জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে, বিছট গ্রামের মৃত কানাই সরদারের ছেলে শফিকুল ও একই গ্রামের মৃত কালা চাঁদ সরদারের ছেলে আঃ রহমান জানান, তারা ইউরিয়া ২৭ টাকা কেজি, টিএসপি ২৭ টাকা, এমওপি ২০ টাকা ও ডিএপি ২১ টাকা কেজি দরে ক্রয় করেছেন।
আনুলিয়ার মৎস্য ঘের চাষী আল মামুন ও রমজান আলী জানান, তারা ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে ঘের সেচ দিয়ে ঘের প্রসেসিং করেন। এসময় ঘেরের জন্য ন্যুনতম বিঘা প্রতি ১০ কেজি টিএসপি, ১০ কেজি পটাশ, ১৫/২০ কেজি ইউরিয়া ও ১ কেজি করে দস্তা সার প্রয়োগ করতে হয়। অথচ আশ্চার্যজনক হলেও সত্য যে, মৎস্য ঘেরের জন্য কোন সার বরাদ্দ নাই। ফলে অনুনয় বিনয় করে দূরবর্তী এলাকা থেকে কিছু কিছু সার আনতে বাধ্য হয়েছি। আর সারের মূল্যও যেমন বেশী দিতে হচ্ছে, সাথে পরিবহন খরচও গর্চা দিতে হচ্ছে। সবমিলে বোরো আবাদ ও মৎস্য ঘের প্রসেসিং এর জন্য সারের চাহিদা পুরনে ডিলাররা হিমশিম খেতে শুরু করেছে। ডিলাররা বোরো আবাদের চাষীদের চাহিদা মেটাতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে মৎস্য চাষীদের সারের চাহিদা পুরন করবে কি ভাবে?
বিছট বাজারের বিএডিসি সার ডিলার সিলভিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী আঃ সামাদের অনুপস্থিতিতে দোকানে থাকা তার পুত্র সাইফুল ইসলাম জানান, আমাদের চলতি ফেব্রুয়ারী মাসে বরাদ্দ হয়েছে টিএসপি দেড় টন ও ডিএপি ১ টন। সামান্য সার নিমিষেই বিক্রী হয়ে যাবে। তাই দুশ্চিন্তায় আছি।





সম্পর্কিত সংবাদ

  • সরিষার হলুদে রাঙা উপকুলীয় জনপদ কয়রার মাঠ
  • ঠান্ডা ও কুয়াশায় কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব : বাড়ছে কৃষকের দুশ্চিন্তা
  • আশাশুনিতে বিনা চাষ ও চাষকৃত জমিতে সরিষা আবাদ, দিগন্তজুড়ে হলুদ ফুলে সুশোভিত
  • শ্যামনগর হাটে-বাজারে ভেজাল সারে সয়লাব উৎপাদন হচ্ছে ব্যহত, প্রতারিত হচ্ছে কৃষক।
  • আশাশুনিতে শাক-সবজী বীজ বিতরণ ও চাষী প্রশিক্ষন
  • ইউসিবি’র ‘ভরসার নতুন জানালা’ উদ্যোগের আওতায় দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ পেলেন শেরপুরের ১৬০ কৃষি-উদ্যোক্তা
  • ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে কৃষকের রক্ত চুষেছে