কতদিন পর্যন্ত শোক পালন করা যায়?

 মুফতি মাহবুব হাসান :: ইসলাম মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। মানুষের জীবনের প্রতিটি অনুষঙ্গ ও অধ্যায় সম্পর্কে ইসলামের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। ইসলামে রয়েছে শোক পালনেরও নির্দিষ্ট নীতিমালা। তা হলো কেউ মারা গেলে শোক পালন করবে তিন দিন। তিন দিন পরে শোক পালনের কোনো সুযোগ নেই। বরং চতুর্থ দিন থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হবে।
তবে হ্যাঁ, স্বামী মারা গেলে স্ত্রী চার মাস ১০ দিন অথবা গর্ভস্থিত সন্তান যদি থাকে তাহলে প্রসব হওয়া পর্যন্ত শোক পালন করবে। উম্মে আতিয়্যাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মহিলা যেন মৃতের জন্য তিন দিনের অধিক শোক পালন না করে। অবশ্য স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন ছাড়া। (সহিহ বুখারি) মূলত নারীর তিন দিনের বেশি এই শোক পালন হলো ইদ্দত। ইদ্দত পালনের সময় ঘর থেকে প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়া যাবে না এবং অন্যত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে না।
ইদ্দত পালন করা মহিলাদের জন্য আবশ্যক। তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে ইদ্দত হলো তিন হায়েজ অতিবাহিত হওয়া। আর যদি স্বামী মারা যায়, তাহলে স্ত্রীকে চার মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হয়। এ বিষয়ে কোরআনে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তাদের স্ত্রীরা চার মাস ১০ দিন প্রতীক্ষায় থাকবে।’ (সুরা বাকারা ২৩৪)

অতএব ইসলামের বিধান হলো কেউই তিনদিনের অতিরিক্ত শোক পালন করবে না। শুধু স্বামী মারা গেলে চার মাস ১০ দিন অথবা সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত মহিলারা শোক পালন কিংবা ইদ্দত পূর্ণ করবেন। মৃত্যু দিবস পালন করা, এ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করা, নতুন করে আবার শোক দিবস পালন করা, এসব ইসলামে নেই। মৃত ব্যক্তিদের ব্যাপারে যা করণীয় ইসলামে রয়েছে তা হলো, সব সময়ই তাদের জন্য দোয়া করা।

হজরত রাসুল (সা.)-এর জীবনেও শোক এসেছে। বিভিন্ন সময় তার প্রিয়জনদের হারাতে হয়েছে। জন্মের আগে পিতাকে আর ছয় বছর বয়সে মাকে হারান। আট বছর বয়সে দাদাকে হারিয়ে একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। নবুয়তের দশম বছরে তার চাচা আবু তালেব ইন্তেকাল করেন। এই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই পাঁচ দিনের ব্যবধানে তার সহধর্মিণী খাদিজা (রা.)

ইন্তেকাল করেন। এছাড়া রাসুল (সা.)-এর ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ফাতেমা (রা.) ছাড়া সবাই তার জীবদ্দশায় ইন্তেকাল করেন। সন্তান হারানোর কষ্ট তাকে সইতে হয়েছে। তিনি প্রতি বছর শোক পালন করেননি। সাহাবিদের জীবনীতেও শোক দিবস পালনের উদাহরণ নেই। আমাদেরও প্রিয়নবী ও সাহাবিদের অনুসরণ করতে হবে। প্রিয়জনকে হারানোর দুঃখ-বেদনা কঠিন বাস্তবতা।

প্রিয়জনের মৃত্যুর ফলে পাওয়া দুঃখকেই সাধারণত শোক বলা হয়। মহান আল্লাহ এই কষ্টের বিনিময় দান করবেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই প্রতিদান প্রাপ্তির আশায় ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তকদিরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি যার কোনো প্রিয়জনকে উঠিয়ে নিই আর সে ধৈর্য ধারণ করে এবং নেকির আশা রাখে আমি তাকে জান্নাত দিয়েই সন্তুষ্ট হব।’ (তিরমিজি)



(পরবর্তী সংবাদ) »



সম্পর্কিত সংবাদ

  • সেলফি প্রবণতা কি ইবাদতের মাহাত্ম্য নষ্ট করে?
  • কর্মক্ষেত্রে যেসব বিষয় লক্ষ রাখা জরুরি
  • কর্মক্ষেত্রে যেসব বিষয় লক্ষ রাখা জরুরি
  • ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নতুন মহাপরিচালক রেজানুর রহমান
  • আজকের নামাজের সময়সূচি (৩১ অক্টোবর ২০২৪)
  • সচ্চরিত্রবানরা নবীজির কাছাকাছি থাকবে
  • হজের প্রাথমিক নিবন্ধন ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে
  • নামাজ না পড়লে যে শাস্তি