নিউজ ডেস্ক :: ইসলামের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান মসজিদে নববী। এখানেই অবস্থিত হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা শরিফ। গত জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত মদিনার মসজিদে নববীতে এক কোটি মানুষ নামাজ আদায়ের পাশাপাশি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা জিয়ারত করে সালাম পেশ করেছেন।
হারামাইন প্রশাসন জানিয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা জিয়ারতকারী পুরুষের সংখ্যা ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮৫ জন। আর নারীর সংখ্যা ৪৭ লাখ ২৬ হাজার ২৪৭ জন। রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ আদায়কারীর সংখ্যা দৈনিক ৪৮ হাজারে পৌঁছেছে। রিয়াজুল জান্নাতের আয়তন ৩৩০ বর্গমিটার, ধারণক্ষমতা ঘণ্টায় ৮০০ জন। এখানে একজন নামাজি গড়ে ১০ মিনিট সময় পান।
মসজিদে নববীতে আসা, নামাজ আদায় করা, রওজা শরিফ জিয়ারত করা, রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পৌঁছানো এবং রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ আদায় করা খুবই সওয়াবের কাজ। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, মসজিদে নববী ও রিয়াজুল জান্নাতের মতো পবিত্র ও সম্মানিত স্থানে এসেও সেলফি রোগে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণির মুসল্লি।
শুধু সেলফিই নয়, কেউ কেউ তো এমন কাণ্ডও করছে যে, একজন কান্নারত অবস্থায় দোয়ার অভিনয় করছে বা নামাজের মতো অঙ্গভঙ্গি করছে, আরেকজন সেটার ছবি তুলে দিচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ড আমলের সওয়াব ধ্বংসে মারাত্মকভাবে ভূমিকা রাখছে। এসব স্থানে সেলফি বা ছবি তোলার মূল উদ্দেশ্যই হলো আত্মপ্রদর্শন।
এটাকে শরিয়তের ভাষায় ‘রিয়া’ বলে। এই ‘রিয়া’ বা প্রদর্শন যদি হয় ইবাদতের ক্ষেত্রে তাহলে তা ইমানকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে উল্লেখ আছে, মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, তিনি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘সামান্যতম রিয়াও (লোক দেখানো আমল) শিরক।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে সৌদি সরকার রওজা শরিফ ভ্রমণে নতুন আচরণবিধি ঠিক করে দেয়। সেখানে কোন কোন কাজ করতে হবে এবং কোন কোন কাজ করা যাবে না তা জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই বিধি অনুযায়ী রওজা শরিফে পৌঁছানোর আগেই দর্শনার্থীদের আসন সংরক্ষণের জন্য আবেদন করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে উপস্থিত হতে হবে।
সেখানে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা যাবে না। সঙ্গে খাবার নিয়ে যাওয়া, ছবি তোলা, ভিডিও করা এবং বাড়তি সময় অবস্থান করা নিষিদ্ধ। সেখানে ছবি তোলা ও ভিডিও করা শরিয়তে নিষিদ্ধ, সৌদি আইনে নিষিদ্ধ এবং সেখানে অবস্থানরত সৌদি পুলিশও প্রতিনিয়ত নিষেধ করে যাচ্ছে। এরপরও অনেক মুসল্লি নির্লজ্জের মতো ছবি তুলে যাচ্ছে।
বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যারা সেখানে ছবি তোলে ও ভিডিও করে তাদের বেশির ভাগই হলো বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিক। এত নিষেধের পরও তাদের কি বোধোদয় হবে না যে, সেখানে ইবাদতের উদ্দেশে গিয়ে ছবি তুললে ইবাদতের মাহাত্ম্য নষ্ট হবে এবং ইবাদত হবে সওয়াবশূন্য? শুধু তাই নয়, ইমানও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আল্লাহতায়ালা সবাইকে বোঝার তওফিক দান করুন।