কিন্তু আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় গানের আসর সহ অশ্লীলতার প্রতি। প্রতি বছর গানের আসরের পাশাপাশি গাজার আসর বসতো মাজার এলাকায়। মহিলা বাউলরাও নানা ভঙ্গিমায় নেচে-গেয়ে ওরস পালন করতেন।
কিন্তু এবার এসবের আয়োজন ছিল না। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, রোববার দুপুরের পর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্ত ও আশেকানরা দরগাহ এলাকায় আসতে শুরু করেন। তারা মাজার কম্পাউন্ডের উঠানে কাপড় বিছিয়ে অবস্থান নেন। এ সময় অনেকেই তাদের অবস্থান নেয়া স্থলে মোমবাতি প্রজ্বালন, আগরবাতি জ্বালিয়ে ধ্যানে মগ্ন হন।
তাদের সঙ্গে অনেক মহিলা ভক্তেরও উপস্থিতি ছিল। এ দৃশ্য দেখে পাহারায় থাকা আলেম-ওলামা ও ছাত্র-জনতা ক্ষেপে যান। তারা মাজার কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে তাদের উচ্ছেদ করে সরিয়ে দেন। এতে করে অনেকের সঙ্গে তর্কাতর্কির ঘটনা ঘটে। রাতে একাধিকবার ভণ্ডরা মাজার এলাকায় অবস্থান নেয়ার চেষ্টা চালায়।
প্রতিবারই আলেমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় রাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাজার এলাকা পরিদর্শন করেন। তারা মাজার কর্তৃপক্ষ ও আলেম-ওলামাদের সঙ্গে কথা বলে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। মাজার কর্তৃপক্ষ জানান, রাতভর আলেম সমাজের প্রতিনিধিরা মাজার এলাকায় পাহারা দিয়েছেন।
যারাই ওরসকে কেন্দ্র করে বেহায়াপনা করতে উদ্যত হয়েছেন তাদেরকে সরিয়ে দূরবর্তী স্থানে নেয়া হয়। এ কারণে এবার আর ওরসে কোনো ধরনের গান-বাজনাও হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবেই ওরস শেষ হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মাজার এলাকায় অবস্থান করতে না পেরে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মারফতি গানের ভক্তরা পুকুরের অন্যপাড়ে অবস্থান নেন।
ওখানেও তাদের উপর কড়া নজরদারি রাখার কারণে তারা তাদের মতো করে ওরস পালন করতে পারেননি। এতে করে মধ্যরাতের পর তারাও ক্ষোভ দেখিয়েছেন। অনেকেই এর প্রতিবাদ জানান। এ সময় উত্তেজনা দেখা দিলে মাজার কর্তৃপক্ষ গিয়ে তাদের শান্ত করেন।
তবে; সার্বিকভাবে এবার বেহাপনার ছাড়াই ওরস শেষ হয়েছে। এতে ভক্তরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে তিন দিন কাটাতে পেরেছেন। এদিকে গান-বাজনার আসর না বসার কারণে এবার ওরসে লোক সমাগম তেমনটি ঘটেনি বলে জানিয়েছেন মাজারের খাদিম পক্ষের লোকজন। অনেকেই ঝামেলা এড়াতে আসেননি ওরসে।
তবে শাহপরান এলাকার অনেক মানুষ মাজার কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন নাদিম মানবজমিনকে জানিয়েছেন; ওরস ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে পালন হয়েছে।
অতীতে যেভাবে ওরস হতো সেভাবে হয়নি। কিন্তু অতীতের ধারা যে সঠিক ছিল না সেটি এবার প্রমাণিত হয়েছে। গান-বাজনা ও বেহায়াপনা হয়নি। এটি আলেম সমাজ, ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা রুখে দিতে পেরেছি।
ভবিষ্যতে এ ধারা বজায় থাকবে বলে জানান তিনি। এদিকে ওরসকে সামনে রেখে ৫ই সেপ্টেম্বর স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয়ে আলেম সমাজ, জনপ্রতিনিধি ও মাজার কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। অসামাজিক ও অনৈসলামিক প্রতিরোধ কমিটি সিলেটের ব্যানারে আয়োজিত এ বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল মাজার এলাকায় আর কখনো ইসলাম ও সমাজবিরোধী কোনো কাজ করতে দেয়া হবে না।
একই সঙ্গে গান-বাজনা ও মহিলাদের নৃত্য বন্ধ থাকবে। আগামীতে ওরস পালনের সময় তাফসির মাহফিলের আয়োজন করা হবে। তাদের এইসব সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে মাজারের খাদেমদের পক্ষে খাদিম সৈয়দ কাবুল আহমদ ওরসকে সামনে রেখে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন।
ওই বার্তায় তিনি জানিয়েছিলেন- ‘মাজারে ওরস উপলক্ষে গান-বাজনা সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করা হলো। কেউ বাদ্যযন্ত্র নিয়ে আসবেন না। এখন থেকে বৃহস্পতিবারের গান-বাজনা বন্ধ থাকবে। কেউ যদি করার চেষ্টা করেন তাহলে আমরা তা প্রতিহত করবো।’
এর আগে শুক্রবার বাদ জুমা নাচ-গান-মদ-জুয়া, গাজা, অশ্লীলতা, নারী নৃত্যসহ অসামাজিক-অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করে স্থানীয় ছাত্র-জনতা।