রংপুর রাইডার্স‘ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’

নিউজ ডেস্ক :: ফুটবলে আছে ক্লাব বিশ্বকাপ। আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হবে ৩৬ দলের অংশগ্রহণে ক্লাব বিশ্বকাপ। ক্রিকেটে এমন আসর নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলও ( আইসিসি) ক্লাব বিশ্বকাপ আয়োজনের উদ্যোগ নেয়নি। তবে এই প্রথম পাঁচ দেশের ফ্রাঞ্চাইজি-ভিত্তিক টি-২০ চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে গায়ানায় বসেছে গ্লোবাল সুপার লিগ। ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্যোগে এই আয়োজন। অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ, বাংলাদেশের বিপিএল, পাকিস্তানের পিসিএল, ইংল্যান্ডের টি-২০ ব্লাস্ট এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে এই আসর। সাধারণত বিশ্বকাপ হয় বিভিন্ন ভেনুতে। প্রথম এই গ্লোবাল সুপার লিগ হলো গায়ানার রাজধানী জর্জটাউনের প্রভেন্সিয়াল স্টেডিয়ামে। এর পরও টি-২০ এর এই গ্লোবাল সুপার লিগ বিশ্বকাপ পদমর্যাদারই। বলতে গেলে অঘোষিত বিশ্বকাপ। আর এই ‘বিশ্বকাপ’ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের রংপুর রাইডার্স। গতকাল ভোরে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন-ভিত্তিক ক্লাব ক্রিকেট ভিক্টোরিয়াকে ৫৬ রানে হারিয়ে এই শিরোপা জয়। ওপেনার সৌম্য সরকারের ৮৬ রানের উপর ভর করে রংপুর রাইডার্স যে তিন উইকেটে ১৭৮ রান করে এর ধারে কাছেও যেতে পারেনি ভিক্টোরিয়া। ১৮.১ ওভারে ১২২ রানে অলআউট কোরি অ্যান্ডারসনের দল। এটি সব মিলিয়ে রংপুর রাইডার্সের দ্বিতীয় টি-২০ ট্রফি। এর আগে তাদের চ্যাম্পিয়নশিপের স্বাদ ছিল ২০১৭ সালে বিপিএলে।

আইসিসি কোনো দিন এই গ্লোবাল সুপার লিগকে বিশ্বকাপের মর্যাদা দেবে কি না তা অজানা। তবে বাংলাদেশী ক্লাবটি প্রথম এই আসরে শিরোপা জিতে রেকর্ড বুকে ঠাঁই করেই নিয়েছে। সারা জীবনই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সমাদ্রিত হবে রংপুর রাইডার্স। যদিও এই ক্লাবটির খেলারই কথা ছিল না। গত বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন দল ছিল ফরচুর বরিশালের অংশ নেয়ার কথা ছিল আসরটিতে। কিন্তু তাদের অনিচ্ছায় সেমিফাইনালে বিদায় নেয়া রংপুর রাইডার্সের খেলার সুযোগ হয়। তবে কেউ-ই ভাবেনি নুরুল হাসান সোহানদের ক্লাবটি যে চ্যাম্পিয়ন হবে। যে খানে তারা প্রথম দুই ম্যাচে হেরে ফাইনালে উঠাই অনিশ্চিত করে ফেলেছিল। অথচ তাদের ঘরেই শিরোপা। লিগ পর্বে এই ভিক্টোরিয়ার কাছে ১০ রানে হার। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের হ্যাম্পশায়ার হকসের সাথে টাই হওয়া ম্যাচে সুপার ওভারে হার। সেই দলই তৃতীয় ও চতুর্থ ম্যাচে জয়ের স্বাদ পায় গায়ানার আমাজন ওয়ারিয়র্স এবং পাকিস্তানের লাহোর কালান্দার্সের বিপক্ষে। গায়ানাকে ১৫ এবং ডিএল মেথডে কালান্দার্সকে ২৩ রানে পরাজয়ের তেতো স্বাদ দেয়। পাকিস্তানি ক্লাবটির বিপক্ষে জয়ই ফাইনালে নিয়ে গেছে রাইডার্সকে।
ফাইনাল ম্যাচে রংপুর রাইডার্স আসরের সর্বোচ্চ রান করে। এতে দুই ওপেনার সৌম্য সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টিভেন টেইলর ১৪ ওভারে ১২৪ রানের যে ভিত্তি গড়ে দেন সে রানও করতে পারেনি ভিক্টোরিয়া। ৪৯ বলে চারটি বাউন্ডারি এবং সমানসংখ্যক ছক্কায় টেইলর ৬৮ রানের ইনিংস গড়েন। তিনি প্যাভিলিয়নে ফিরলেও সৌম্যকে আউট করতে পারেনি কোনো বোলার। বাংলাদেশ দলের এই ক্রিকেটার ৫৪ বলে সাত চার এবং পাঁচ ছয়ে ৮৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। সাথে অধিনায়ক সোহান দুই রানে অপরাজিত থাকেন। মধ্যে সাইফ হাসান চার বলে ছয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়েইনি মাডসেন ৯ বলে ১০ করে আউট হন।

যাওয়ার আগেই সংবাদ সম্মেলনে রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক সোহান বলেছিলেন তার দলে অভিজ্ঞ স্পিনাররা আছেন। তবে একটি বারের জন্যও বলেননি চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছেন। কাল ফাইনালে এই স্পিনাররাই ট্রফি জয়ের বাকি কাজটি করেছেন। সপ্তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ান ক্লাবটি এক উইকেটে ৬৫ রান তুললেও এরপর স্পিনারদের ঘূর্ণি বিষ। ভারতীয় স্পিনার হারমিত সিং চার ওভারে ১৯ রান দিয়ে নেন তিন উইকেট। মাহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন এবং সাইফ হাসানের দখলে দু’টি করে উইকেট। রিশাদের বলে যখন প্রতিপক্ষের শেষ ব্যাটার জ্যাকব স্মিথ হারমিতের হাতে ধরা পড়েন তখনই প্রথম আস্তর্জাতিক ট্রফি জয় নিশ্চিত হয় রংপুর রাইডার্সের। মাহেদী ২০ রানে , সাইফ ২১ রানে এবং রিশাদ ২৬ রানে দুই উইকেট নেন। যদিও প্রথম আঘাতটি হেনেছিলেন কামরুল ইসলাম রাব্বী।
অথচ সৌম্য ও রিশাদের মতো এই ফাইনালে খেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল আফিফ হোসেনেরও। আজ থেকে অপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেশ সেন্ট কিডসে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ানডে সিরিজ। প্রথম ওয়ানডে দলে যোগ দিতে বিসিবি রংপুর রাইডার্স ছেড়ে গায়ানা থেকে সেন্ট কিডসে যেতে বলেছিল সৌম্য, রিশাদ ও আফিফকে। গায়ানা দক্ষিণ আমেরিকান দেশ হলেও সেন্ট কিডস ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র। এরা জাতীয় দলে যোগ দিলে ইনজুরি আক্রান্ত রংপুর রাইডার্সের পক্ষে মাঠে নামাই কঠিন হয়ে যেত। শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষের সমঝোতায় সৌম্য-রিশাদদের ফাইনালে অংশগ্রহণ ও ট্রফি নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠা।
আসরে মোট ১৮৮ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন সৌম্য। কাল ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া ছাড়াও টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও জিতেছেন তিনি। আটটি করে উইকেট নিয়েছেন হারমিত সিং ও মাহেদী হাসান। তারা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিকারি। যদিও ৯ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার ভিক্টোরিয়ার কালুম স্ট্রোর’র।

স্কোর : রংপুর রাইডার্স : ১৭৮/৩ (সৌম্য ৮৬ অপ: টেইলর ৬৮, সাইফ ৬, মাডসেন ১০, সোহান ২ অপ:, ডাকেস ১/২০)
ভিক্টোরিয়া : ১২২/১০ও ১৮.১ ওভার, (ক্লার্ক ৪০, ম্যাকডোনাল্ড ১৬, কৃষ্ণমূর্তি ১০, কারিমা ১৩, ডোমেনিক ১২, হারমিত ৩/১৯, সাইফ ২/২১, মাহেদী ২/২০, রিশাদ ২/২৬, রাব্বি ১/ ১৩)।
ফল : রংপুর রাইডার্স : ৫৬ রানে জয়ী।
ম্যাচ ও টুর্নামেন্ট সেরা : সৌম্য সরকার।






সম্পর্কিত সংবাদ

  • চট্টগ্রামের দাপুটে জয়, খুলনার টানা হার
  • উইজডেনের বর্ষসেরা দলে তাসকিন আহমেদ
  • কলারোয়ায় টিসিসি কাপ টি-২০ ক্রিকেটে ব্রজবাকসা সালিফ-রামিনা একাডেমি সেমিফাইনালে উন্নীত 
  • আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন তামিম
  • দ্বিতীয় জয় চট্টগ্রামের, ঢাকার টানা পঞ্চম হার
  • চ্যাম্পিয়ানশীপ টুর্নামেন্টে রানার্স-আপ সৈয়দপুর দলকে সংবর্ধনা প্রদান
  • কলারোয়া তুলসীডাঙ্গা ক্রিকেট ক্লাবের আয়োজনে T,C,C কাপ T-20 ক্রিকেট টুর্ণামেন্টের উদ্বোধন
  • কলারোয়া ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জমজমাট প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ