আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার হবে
নিউজ ডেস্ক :: ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা ও গুলিবর্ষণের ঘটনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল বুধবার সকালে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
আইন উপদেষ্টা জানান, ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হত্যার ঘটনায় মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সাবেক সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাসহ অন্য যাদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল আরও বলেন, ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব দিতে হবে। এ ছাড়া ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন-সংক্রান্ত ঢাকার মামলাগুলো আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে এবং সারা দেশে হওয়া মামলাগুলো আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আন্দোলনে গণহত্যা ও গুলিবর্ষণের ঘটনার বিচার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘গণহত্যা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় বিচারের জন্য ইতিমধ্যে কিছু মামলা হয়েছে। আমরা নিজেরা, রাজপথে থাকা বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, জনগণের বিভিন্ন গোষ্ঠী দাবি করেছেন যে, এটাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিচার করার সুযোগ আছে কি না। আমরা সেটা খতিয়ে দেখেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন আছে, ২০০৯ ও ২০১৩ সালে এই আইনের সংশোধনী হয়েছে। সেই আইনে আমরা জুলাই গণহত্যা; আগস্টের প্রথম পাঁচ দিনের গণহত্যাও বোঝাচ্ছি। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য ইতিমধ্যে ছোটখাটো গবেষণা করেছি। আমরা দেখেছি, এই আইনের অধীনে হত্যাকা-ে জড়িত ব্যক্তি ও যারা আদেশ দিয়েছেন এবং যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব।’
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি তদন্ত সংস্থা আছে, প্রসিকিউশন টিম আছে। এগুলো আমরা রি-অর্গানাইজড করার চেষ্টা করছি, আদালতটা একটু পরে করব। তদন্তকাজটি আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করার চেষ্টা করছি। জাতিসংঘ থেকে বারবার আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিচারের সত্যিকারের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সর্বাত্মক তত্ত্বাবধানে আমাদের তদন্ত সংস্থা কাজ করবে। সেটার লক্ষ্যে সব উদ্যোগ গ্রহণ করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হলেও তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। তাদের সহযোগিতা চাইব। এ ছাড়া আমাদের আরও উচ্চপর্যায় থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সংস্থা আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। আশা করছি, দ্রুত এটা শুরু করতে পারব।’
এই বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে করা হবে কি না এমন প্রশ্নে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আপনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তখনই যেতে পারবেন, যদি আপনি নিজস্ব অপরাধ আদালতে এটার বিচার করতে অনিচ্ছুক বা অসমর্থ হন। আমরা তো অসমর্থ না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই বিচারের আওতায় বিগত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখে বিচার করা সম্ভব বলে আমরা মনে করছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আপনারা জানেন, মন্ত্রীরা পুলিশ প্রশাসনকে কীভাবে ব্যবহার করেছেন। মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতারা ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে অন্যতম ভূমিকা রাখা সংগঠনকে কী ধরনের সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করেছেন। শুধু পুলিশ-ছাত্রলীগের অপরাধ দেখলে হবে না, যাদের আদেশ-নির্দেশে তারা করেছেন, সেটা সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিও যদি হয়, সেটাও সেই আইনের আওতায় বিচার করা সম্ভব।’
বিচার বিভাগের সংস্কারের জন্য কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে আইন ও বিচার উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে বিচার বিভাগীয় সব কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশ-বিদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব বিবরণী আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একজন প্রধান বিচারপতি পেয়েছি, যিনি অক্সফোর্ড থেকে পড়াশোনা করেছেন। টাফট ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। আমরা কোয়ালিটি ও ইন্টিগ্রিটির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে সম্পূর্ণ দলীয় ভিত্তিতে নিয়োগ হয়েছিল, তার মধ্যে প্রায় অর্ধেকের মতো আইন কর্মকর্তা ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। সেখানে আমরা বেশ কিছু আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছি। অনেক তাড়াহুড়া করে নিয়োগ দিচ্ছি, তারপরও যতটা স্ক্রুটিনি-কনসালটেশন করা যায়, করছি। দু-একটা ভুল হতে পারে। সেগুলো সংশোধনের সুযোগও থাকবে।’
‘আয়নাঘরে গুমের শিকার’ ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্র ও যেকোনো ব্যক্তি মামলা করতে পারে। মানবতাবিরোধী অপরাধের যে সংজ্ঞা আছে, সেখানে গুম নামে অপরাধও অন্তর্ভুক্ত। ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করতে পারেন অথবা পরে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমরা উদ্যোগ নিতে পারি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সহযোগিতা চাইলে আমরা অবশ্যই সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের আইন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে আসিফ নজরুল বলেন, ‘যতগুলো নিবর্তনমূলক আইন আছে, সেটার তালিকা করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ধারাগুলো, যেগুলোর মাধ্যমে সাংবাদিকদের হয়রানি করা হয়েছে, সেটা আমরা বাতিল বা সংশোধন, যেটা প্রয়োজন সেটা করব।’ এ সময় সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের বিচার হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির একটি বিশেষ আইন আছে, সেটি বাতিল করবেন কি না জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ড. ইউনূস স্যারের এখতিয়ারাধীন রয়েছে। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, স্যারকে এটা বলব। আমি বিশ্বাস করি, খুব দ্রুত এটা বাতিল করা হবে।’
আসিফ নজরুল জানান, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের পাসপোর্ট ইতিমধ্যে ফেরত দেওয়া হয়েছে। রোজিনা ইসলাম ও মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে হওয়া মামলা আগামীকালের (আজ) মধ্যে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পর্কিত সংবাদ
ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে আবারও গুলি
নিউজ ডেস্ক :: যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে ওয়েস্ট পাম বিচ এলাকায় একটি মাঠে গলফ খেলছিলেন ডোনাল্ডবিস্তারিত…
জিতলে ওভারটাইমে কর বাদ দেবেন ট্রাম্প
নিউজ ডেস্ক ::আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন,বিস্তারিত…