বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার, মৎস্য ও পাখি শূন্য হচ্ছে সুন্দরবন

আহসান হাবীব সিয়াম, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি :: সুন্দরবনের নদী ও খালে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই। বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অসাধু জেলেদের একটি চক্র।পরিবেশ বিদরা বলছেন বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারে কারনে সুন্দরবনের নদী ও খাল মৎস্যজাত প্রানী ও পাখী শুন্যর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায় জেলেরা সুন্দরবনের খালে জোয়ারের আগে চিঁড়া, ভাত বা অন্য কিছুর সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে নদী ও খালে ছিটিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পানিতে ভেসে ওঠে। জেলেরা ওই মাছ ধরে স্থানীয় আড়তসহ বিভিন্ন হাটবাজারে সরবরাহ করেন।এছাড়া ভেসে উঠা মাছ খেয়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রকার পাখী ও মৃত্যু হচ্ছে যে কারনে সুন্দরবনে পাখী কমে যাচ্ছে। এক শ্রেণির অসাদু বনরক্ষীদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে জেলেরা বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছেন এমন অভিযোগ অহরহ। সুন্দরবনের ফাড়ী কর্মকর্তা কর্মচারীরা এর জন্য দায়ী বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষ দিয়ে অল্প সময়ে অধিক মাছ ধরা সম্ভব বলে জেলেরা জানান।
এছাড়া ঐ মাছ নিরাপদে লোকালয়ে পৌঁছাতেও টাকা দিতে হয় স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। মাঝে মধ্যে ২/১ জন ধরা পড়লেও আইনের ফাকফোকরে জামিন নিয়ে এসে তারা আবার ও পূর্বের পেশায় ফেরার খবর পাওয়া যাচ্ছে।যে কারনে অপরাধচক্রটি দিন দিন বেপরোয়া হচ্ছে। জানা যায়, সুন্দরবনে পর্যটকসহ মাছ ও কাঁকড়া আহরণে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অব্যাহতভাবে চলছে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের কার্যক্রম। বনবিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালিয়েও দমন করতে পারছেন না তাদের।
সুন্দরবন উপকূলবর্তী কয়রা উপজেলার ইয়াসিন, কামাল, আল আমিনসহ বেশ কয়েকজনের পাশাপাশি বন বিভাগের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তি, কয়েকজন মৎস্য আড়তদার, দাদনদাতা এমনকি সংবাদকর্মীদের ছত্রছায়ায় অসাদু জেলেরা সুন্দরবনে প্রবেশ করে। কিছু কীটনাশক বিক্রেতা এ চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে। ওইসব কিটনাশক বিক্রেতাদের কাছ থেকে অবাধে কীটনাশক সংগ্রহ করে তা মাছ ধরার কাজে অপব্যবহার করছে। আবার কিছু অসাদু বনরক্ষী ও কর্মকর্তা উৎকোচের বিনিময়ে এসব দেখেও না দেখার ভান করেন। এর মধ্যে ডায়মগ্রো, ফাইটার, রিপকর্ড এবং পেসিকল নামক কীটনাশকই বেশি ব্যবহার করেন জেলেরা। স্থানীয়রা জানান, সুন্দরবনের কয়রা অংশের তেঁতুলতলার চর, জোড়সিং, নীলকোমল, মোংলার ঢাংমারী, মরাপশুর, জোংড়া, ঝাপসি, ভদ্রা, নীল কমল, হরিণটানা, কোকিলমুনী, হারবাড়িয়াসহ শরণখোলা, বটিয়াঘাটা, শ্যামনগর, আশাশুনির বেশ কয়েকজন মৎস্যদস্যু বিষ দিয়ে মাছ ধরছে। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা সাতক্ষীর রেঞ্জের দোবেকি, খবরাখালী দারগাং, কাছিকাটা, আঠারবেকী, ফিরিঙ্গি, ফুলবাড়িয়া, হাতিভাঙ্গা চালতেবাড়িয়া, উলুবাড়িয়া, বেহালা কয়লা, তালপট্টি, ইলশেমারি, নোটাবেকী, পুষ্পকাটি মান্দারবাড়িয়া, বিবিরমাদিয়া, হাড়িয়াভাঙ্গা, চুনকুড়ি দত্তেখালি, খাসি টানা সহ সুন্দরবনের অসংখ্য নদীখালী বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে সেই মাছ জেলেরা শ্যামনগরের সোনার মোড় মৎস্য আড়ত সহ বিভিন্ আড়তে বিক্রি করছে। মৎস্য আড়ৎ গুলোতে অভিযান পরিচালনা করলে বিষ প্রয়োগে শিকারকৃত মাছ ও মিকারীদের আটকের দাবী ও সচেতন মহলে। বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারীদের সাথে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে কিছু প্রভাবশালী মৎস্যআড়তদার ।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা করা রয়েছে। এ সময় বনের নদী-খালে মাছ ও কাঁকড়া ধরার পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এই মৌসুমে সুন্দরবনে খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ১১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ সময় ১২৪ জেলেকে আটক করা হয়েছে। এলাকার জেলেদের দাদনের ফাঁদে ফেলে বিষ দিয়ে মাছ শিকারে উৎসাহিত করেন মৎস্য আড়তদাররা এমন অভিযোগ রয়েছে ।
এব্যাপারে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিয়ুর রহমান জানান,বিষ দিয়ে মাছ শিকার নির্মূলে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য অফিসার জানান, বিষদিয়ে মাছ সশিকারকরীদের বিরুদ্ধে আমরা বারবার অভিযান পরিচালনা করছি।
সম্পর্কিত সংবাদ

সুন্দরবন থেকে জবাইকৃত হরিণ সহ ফাঁদ উদ্ধার
আহসান হাবীব সিয়াম, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি:: সুন্দরবনে অভিযান চালিয়ে ১টি মৃত হরিণ, ১৬ কেজি হরিণেরবিস্তারিত…

শ্যামনগরে বাঘ ট্রাংকুলাইজেশন ও খাল সার্ভে বিষয়ক প্রশিক্ষন
আহসান হাবীব সিয়াম, শ্যামনগর :: সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে ৩ দিন ব্যাপী বাঘ ট্রাংকুলাইজেশন ও খালবিস্তারিত…