আশাশুনির ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি, কয়েক শ’ পরিবার বাড়ি ছাড়া, খাদ্য-পানি সংকট
জি এম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি (সাতক্ষীরা) ঃ গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নে প্রায় ৩ হাজার পরিবারের ১২ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাড়িতে বসবাসের উপযোগীতা না থাকায় বাড়ি ছেড়েছেন কয়েক শ’ পরিবার। ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা জমির মৎস্য ঘের। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও সুপেয় পানি সংকট। একেবারেই ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা পানি বাহিত রোগ। এলাকার মানুষ প্রায় দেড় মাস পানি বন্দি অবস্থায় থাকলেও পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। মানুষ কোন রকমে কষ্ট করে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকে টিনের উপর অথবা ছাদের উপর রান্না করে একবেলা খেয়ে দুই বেলা উপোস করে দিন পার করছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা গেলে এলাকার মানুষের দুর্ভোগেরর শেষ থাকবে না।
গতকাল রবিবার উপজেলা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে কাদাকাটি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, কাদাকাটি উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া যদুয়ারডাঙ্গা, পূর্ব কাদাকাটি, টেংরাখালী, তালবাড়ীয়া বলাবাড়িয়া, মোকামখালী, মিত্র তেতুলিয়া, শ্রীরামকাটি, ঝিকরা সহ ইউনিয়নের প্রায় ১৫ টি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। যতদূর চোখ যায় চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। মানুষ নিরুপায় হয়ে কোন রকমে ভেলা ও নৌকায় করে চলাচল করছে। অনেকে নিচু এলাকা থেকে একটু উচ্চ জায়গায় এসে বসবাস করছে। কেউ কেউ আবার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে চলে গেছে।
কাদাকাটি গ্রামের রমজান আলী বলেন, পার্শ্ববর্তী তালা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার পানি আমাদের এই ইউনিয়নের উপর দিয়ে বেতনা নদিতে নিষ্কাশিত হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতিকারীর জন্য আমাদের এই পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। আমরা প্রায় দেড় মাস পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও কেউ এদিকে আসে না, কেউ আমাদের খবর নেয় না। আমাদের এলাকার মানুষ চরম খাদ্য ও সুপেয় পানি সংকটে ভুগছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম বলেন, এলাকার কিছু প্রভাবশালী খাল গুলো নেটপাটা দিয়ে দখল করে রেখেছে, যে কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। তিনি দ্রুত নেট পাঠা অপসারণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার দাবি জানান।
যদুয়ারডাঙ্গা গ্রামের পূর্ণিমা রানী মন্ডল বলেন, আমাদের খুব কষ্টের মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে। পানির মধ্যে থাকায় হাত পায়ে ঘা হচ্ছে। বিষাক্ত সাপ ও পোকার ভয় সব সময় লেগে থাকে। বিশেষ করে আমাদের বাচ্চাদের নিয়ে খুব ভয়ে আছি। কারণ চারিদিকে পানি আর পানি। দ্রুত সময় আমাদের এর থেকে উদ্ধার করেন, আমরা এই পানির ভেতরে আর বসবাস করতে পারছি না।
মিত্র তেতুলিয়া গ্রামের মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নের অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানিতে জলমগ্ন হঢর আছে, এর প্রধান কারণ হচ্ছে অবৈধভাবে খাল দখল। এলাকার অবৈধ দখল নেওয়া খাল গুলো যদি উন্মুক্ত করা হয় তাহলে এই পানি নিষ্কাশন করে মানুষকে দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা করা যেত।
কাদাকাটি ইউপি চেয়ারম্যান দীপঙ্কর কুমার সরকার দীপ বলেন, ইউনিয়নের নয়টা ওয়ার্ডের সবগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। বর্তমানে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। সুপেয় পানি, সেনিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হাজার হাজার বিঘা মৎস্যঘের তলিয়ে গেছে। এমতাবস্থায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাল উন্মুক্ত, স্লুইচগেট দ্রুত সংস্কার এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষ্ণা রায় বলেন, আমরা পানি নিষ্কাশনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের কোন পথই পাচ্ছি না। কিভাবে পানি নিষ্কাশন করা যায় এ বিষয়ে যদি আপনাদের কাছে কোন তথ্য থাকে আমাকে বললে আমরা সেভাবে চে
« ফিংড়ী ইউনিয়নে সিরাতুন্নাবী (সাঃ) মাহফিল অনুষ্ঠিত (পূর্ববর্তী সংবাদ)
(পরবর্তী সংবাদ) সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা »
সম্পর্কিত সংবাদ
কুল্যার কচুয়া প্রাইমারী স্কুলে ক্লাস্টারের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
জি এম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি :: আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ক্লাস্টারের প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের সমন্বয় সভাবিস্তারিত…
বুধহাটায় আইএফআইসি ব্যাংকের কম্বল বিতরণ
জি এম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি :: আশাশুনি উপজেলার বুধহাটায় আইএফআইসি ব্যাংকের উদ্যোগে অসহায় মানুষের মাঝেবিস্তারিত…