ভারতের ঋণের ৫ প্রকল্প নিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ রেলওয়ে
নিউজ ডেস্ক::ভারতের ঋণে বর্তমানে দেশের ৫টি রেল প্রকল্প চলমান রয়েছে। পৌনে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে এই প্রকল্পগুলো হাতে নেয়া হয়েছে। ভারতের ঋণের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন নিয়ে অম্ল অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ রেলওয়ের। সবগুলো প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে করা যাচ্ছে না।
ঋণের অর্থছাড় নিয়েও জটিলতায় পড়ছে প্রকল্পগুলো। কিছু ক্ষেত্রে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ার কারণে ব্যয়ও বাড়াতে হচ্ছে। অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এসব চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, দেশে ভারতের ঋণে চলমান ৫টি প্রকল্পের অগ্রগতি কচ্ছপগতিতে চলছে।
কবে নাগাদ এসব প্রকল্প শেষ হবে তাও জানেন না কেউ। সরকার পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় প্রকল্পগুলো অস্থিরতার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে বলে সম্প্রতি এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে কিছু প্রকল্পের কাজ থমকে আছে।একবার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে গেলে এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এলে, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে কাজগুলো শুরু করবে।এসব প্রকল্পের মধ্যে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা।
এরমধ্যে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা ঋণ দেবে ভারত। বাকি ২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকার জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। এই প্রকল্পের মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানোর পর এখন ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজ হয়েছে ১০ শতাংশেরও কম।
প্রকল্প সূত্র জানায়, ভারতের থেকে তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় অর্থছাড় না হওয়ায় আটকে আছে প্রকল্পের কাজ।অর্থছাড়ের ব্যাপারে অন্তত ৪ থেকে ৫টি চিঠি দেয়া হলেও কোনো চিঠির জবাব পাচ্ছে না রেলওয়ে।রেলওয়ে সূত্র বলছে, ভারতের ঋণের প্রকল্পগুলোতে অর্থছাড়েও দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। এ ছাড়া কাজের প্রতিটি ধাপে অনুমোদনের শর্ত দিয়েছে ভারত।
ভারতীয় ঠিকাদার ও পরামর্শক নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে। তাই ভারতের ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বিকল্প অপশন না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচও বেশি লাগে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পও হচ্ছে ভারতের ঋণে।
এক যুগের বেশি সময় ধরে চলছে প্রকল্পের কাজ। মেয়াদের সঙ্গে কয়েক দফায় এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ৩ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা ভারতের ঋণে আর বাকি ৫২১ কোটি অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের মোট ৩৬ শতাংশ কাজ হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক নাজনীন আরা কেয়া জানান, এক বছর ধরে অনুমোদন জটিলতায় কাজের গতি ধীর হয়ে আছে।ভারতের ঋণে আরেকটি প্রকল্প খুলনা-দর্শনা জংশন সেকশনে ডাবল লাইন রেলপথ। গত সাড়ে ৬ বছরেও এই প্রকল্পের ৪ শতাংশ কাজও হয়নি। প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, ৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে প্রকল্পের।
এর মধ্যে প্রকল্প ব্যয়ের ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ভারতের ঋণ; বাকি ৮১৬ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্প পরিচালক মনিরুল ইসলাম ফিরোজী বলেন, ঠিকাদার নিয়োগের জন্য টেন্ডার আহ্বানের জন্য প্রস্তুতি রয়েছে।পার্বতীপুর-কাউনিয়া ডুয়েলগেজ রেললাইনটির প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে ভারতের ঋণ ১ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা।
বাকিটা অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার। ছয় বছরের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালে। এখনো চলছে সম্ভাব্যতা যাচাই। আগামী ডিসেম্বরে তা শেষ হওয়ার কথা। এ কারণে এখনো প্রকল্পের নতুন মেয়াদ ঠিক করা হয়নি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ২৫শে আগস্ট ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তারা গত বছর ১৫ই জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশে পুরনো মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজ লাইন না করে তার পাশ দিয়ে নতুন করে ডুয়েলগেজ লাইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। এতে করে প্রায় সমপরিমাণ ব্যয়েই প্রকল্প শেষ করা যাবে বলে দাবি করছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।
ভারতের ঋণে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনঃস্থাপন প্রকল্প কাজের চতুর্থ দফা বর্ধিত মেয়াদেও শেষ হয়নি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে। এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ফের পঞ্চম দফায় মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক মো. সুলতান আলী বলেন, এই প্রকল্পে এখন বাংলাদেশর শ্রমিকরা কাজ করছে।
ভারতের যারা কর্মকর্তা আছেন তারা কেউ নেই। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, আমরা সচিবকে অবহিত করেছি। এই প্রকল্পগুলো বর্তমানে কী অবস্থায় আছে এগুলো দেখে আমাদের কী করণীয় সেটা উচ্চ পর্যায়ে জানানো হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গত সরকারে যারা ছিলেন তারা বাধ্য হয়ে এই প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছেন।
ভারতের কানেক্টিভিটি স্বার্থ, কন্ট্রাক্টরের স্বার্থ এবং প্রকল্প বাড়িয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার স্বার্থের জন্য এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. শামসুল হক মানবজমিনকে বলেন, এগুলো দেশের স্বার্থ রক্ষাকারী প্রকল্প না।
বরং যারা প্রকল্প নেয়, ফান্ডিং করে। তাদের দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রকল্পগুলো হয়। ভারতের এলওসি অনেক আগেই বন্ধ করা উচিত ছিল। ঋণের শর্তগুলো সার্বভৌমত্বের বিপক্ষে যায়। এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, একটি দুষ্ট চক্র দেশকে দেউলিয়া বানিয়ে ফেলছিল। এর কোনো মূল্যায়ন হয়নি।
গত সরকারের এটা সবচেয়ে দুর্বল জিনিস। বর্তমান সরকার যেহেতু সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটা লক্ষ্যে নেয়ার সংস্কার করছে। তাই তাদের ফিডব্যাকগুলো মাঠ পর্যায় থেকে নিলে আমাদের সামনের যাত্রা সুন্দর হবে।এই বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান মানবজমিনকে বলেন, ভারতের হাইকমিশনার আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।
এগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কিছু লোক ভারতে চলে গেছে। তারা আমাদের কাছে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হতে চেয়েছে। আমরা তাদের আসতে বলেছি। আর তাদের অর্থছাড়ের জন্য কিছু প্রকল্প আটকে আছে। তারা বলেছে, অর্থছাড় যাতে দ্রুত হয় সেটা দেখবে।
ভারতের ঋণের চলমান প্রকল্পগুলো শেষ করা হবে; তবে ভবিষ্যতে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যম ছাড়া আর কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হবে না বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
তিনি বলেন, তাদের (ভারত) বলেছি, ভবিষ্যতে আমরা উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যম ছাড়া আর কোনো প্রকল্প গ্রহণ করবো না। জি-টু-জি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কস্ট বেনিফিট এনালাইসিস (খরচ-সুবিধা বিশ্লেষণ) ভালোভাবে দেখা হবে এবং উচ্চ মূল্যের জি-টু-জি প্রকল্প নেয়া হবে না।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।
সম্পর্কিত সংবাদ
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হলেন ফারজানা মমতাজ
নিউজ ডেস্ক :: বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হলেন ফারজানা মমতাজ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারজানা মমতাজকেবিস্তারিত…
বরখাস্ত হচ্ছেন ১৮৭ পুলিশ কর্মকর্তা!
নিউজ ডেস্ক :: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচারে হামলা ও গুলি করে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং নিরীহবিস্তারিত…