স্পেনকে হারাতে যা করতে হবে ইংল্যান্ডকে

তিকিতাকা থেকে বেরিয়ে এসেছে স্পেন। তারা এখন গতিশীল ফুটবলে আক্রমণে যায় এবং গোলের সুযোগ তৈরি করে। যে দলটি ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে এক ধাঁচের ফুটবল খেলে এসেছে, তারা অল্প সময়ের ব্যবধানে নতুন কৌশল দারুণভাবে আয়ত্ব করে নিয়েছে। এবারের ইউরো জয়ে এই স্পেনই ফেভারিট।

যদিও ফুটবলে সবসময় ফেভারিট-তত্ত্ব খাটে না। ফাইনাল এক ম্যাচের খেলা। দিন যাদের ভালো যাবে, তারাই জেতে শিরোপা। ইংল্যান্ড সেই দিনটিই চাইবে। তিন বছর আগে ফাইনাল মঞ্চে টাইব্রেকারে হেরে যন্ত্রণার যে শেল বুকে বিঁধেছিল, সেটি তুলে শিরোপা ঘরে তুলতে চায় গ্যারেথ সাউথগেটের দল। কিন্তু এবারের প্রতিপক্ষ সব ম্যাচ জিতে ফাইনালে ওঠা স্পেন। তাদের আটকানো সহজ হওয়ার কথা নয়। তবে কয়েকটি জায়গায় জোর দিলে দিনটি হতে পারে ইংল্যান্ডের।

টার্গেট উনাই সিমন-
স্পেনের হয়ে তিনটি বড় প্রতিযোগিতায় গোলবার সামলেছেন উনাই সিমন। এই তিন প্রতিযোগিতার প্রত্যেকটিতে ভুল করেছেন তিনি। ২০২০ সালের ইউরোতে ক্রোয়েশিয়াকে গোল ‘উপহার’ দিয়েছিলেন তিনি। ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপেও ভুগতে হয় তাকে। তার দুর্বল হাতের সুযোগ নিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় পায় জাপান। এবারের ইউরোতেও ক্রোয়েশিয়াকে পেনাল্টি ‘উপহার’ দিয়েছিলেন এই গোলকিপার।

অবশ্য পেনাল্টি ঠেকিয়ে শাপমোচন করেন সিমন। তবে স্পেনের হাইরিস্ক পাসিং ফুটবলের সঙ্গে এখনও ঠিক অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ড লাইনআপ চেপে ধরলেই ভড়কে যান তিনি। সুতরাং, ইংল্যান্ডের ফরোয়ার্ডরা তার ওপর চাপ প্রয়োগ করে ফায়দা তুলতে পারে। ইংল্যান্ড হাই প্রেসিং ফুটবল খেললে সেখানে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন ফিল ফডেন। ফাইনালের কৌশল সাজানোর সময় সাউথগেট সিমনের ‘দুর্বলতা’ আমলে নিতে পারেন।

রোদ্রিকে আটকানো-
এখনকার ফুটবলে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের কথা বললে সবার আগে আসবে রোদ্রির নাম। ইউরোতে স্পেনকে চালকের আসনে রেখেছেন এই মিডফিল্ডার। তার কাজ হয়তো সবার নজরে পড়ে না। কিন্তু রক্ষণভাগ ও ফরোয়ার্ডের সেতুবন্ধনটা তিনিই তৈরি করে যাচ্ছেন। স্পেনের জার্সিতে তিনি সবশেষ হেরেছেন ২০২৩ সালের মার্চে।

অন্যদিকে ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ২০২২ সালের নভেম্বরের পর হেরেছেন মাত্র এক ম্যাচে। রোদ্রি ম্যান সিটি খেলোয়াড়। ইংল্যান্ডের ইউরোর একাদশে নিয়মিত খেলছেন ইংলিশ ক্লাবটির তিন ফুটবলার। যারা ক্লাবে রোদ্রির সঙ্গে প্রতিদিনই অনুশীলন করেন। তারা খুব ভালো করেই জানেন ‘ভুল’ না করা রোদ্রির দুর্বলতা কোথায়।

২০২২ সালের নভেম্বরের পর ম্যান সিটির জার্সিতে রোদ্রি যে ম্যাচটি হেরেছিলেন, সেটি ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে এফএ কাপের ফাইনালে। গত মৌসুমের ওই ম্যাচে ইউনাইটেড ফলস নাম্বার নাইন খেলিয়েছিল ব্রুনো ফের্নান্দেসকে। এই পর্তুগিজ খেলেছিলেন রোদ্রির ঠিক ওপরে। ইউনাইটেড ফল পেয়েছিল। ইংল্যান্ডের হয়ে এই কাজটি করতে পারেন জুড বেলিংহাম।

টাইব্রেকারের প্রস্তুতি-
ইংল্যান্ড দলে যে মানের খেলোয়াড় আছেন, তাতে পেনাল্টি শুটআউটের চিন্তা নিয়ে তাদের মাঠে নামাটা বেমানান। ইংল্যান্ডের প্রাথমিক পরিকল্পনায় টাইব্রেকার না থাকাই স্বাভাবিক। তবে বাস্তবতা বলছে, স্পেনের বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউট হতে পারে ইংল্যান্ডের সাফল্যের অন্যতম অস্ত্র!

টাইব্রেকারে ইংল্যান্ড এখন অন্যতম সফল দল। সাউথগেটের অধীনে চারটি টাইব্রেকারের তিনটি জিতেছে থ্রি লায়ন্স। স্পেনের বিপক্ষেও আছে টাইব্রেকার জেতার সুখস্মৃতি। ১৯৯৬ সালের ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেনকে পেনাল্টি শুটআউটে হারিয়েছিল ইংলিশরা, যে দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন বর্তমান কোচ সাউথগেট।

টাইব্রেকারে ইংল্যান্ডকে আরও ভরসা দিচ্ছে এবারের ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনাল। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে স্পট কিকে ভীষণ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ইংলিশ ফুটবলাররা। তাছাড়া পেনাল্টি শুটআউট নিয়ে সাউথগেটের ‘হোম ওয়ার্ক’-ও ছিল দারুণ। অতিরিক্ত সময়ে মাঠে নামিয়েছিলেন ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার-আরনল্ড ও ইভান টনিকে। যাদের নিখুঁত পেনাল্টি কিকে সেমিফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড।

বেঞ্চের ব্যবহার-
ইউরোর ফাইনালে স্পেন শক্তিশালী। তবে খেলোয়াড়দের সামর্থ্যের মাপকাঠিতে স্পেন থেকে এগিয়ে ইংল্যান্ড। তাদের বেঞ্চ অনেক শক্তিশালী। সাউথগেট ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে যদি বেঞ্চের ব্যবহার ঠিকঠাক করতে পারেন, সেক্ষেত্রেও আসতে পারে সফলতা। সেমিফাইনালেই যেমন বেঞ্চের খেলোয়াড়রা ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছিলেন।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ইনজুরি টাইমে গোল করে ইংল্যান্ডকে ফাইনালে তোলেন ওলি ওয়াটকিনস। বদলি হয়ে মাঠে নামা এই ফরোয়ার্ড যার পাস থেকে গোল করেছেন, সেই কোল পালমারও নেমেছিলেন বেঞ্চ থেকে।

এছাড়া বেঞ্চ থেকে মাঠে নেমে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে জয় এনে দিয়েছিলেন অ্যালেক্সান্ডার-আরনল্ড ও ইভান টনি। স্পেনের বিপক্ষেও বেঞ্চের শক্তি গড়ে দিতে পারে পার্থক্য।

ইয়ামালকে জায়গা না দেওয়া-
ইউরোতে দুর্দান্ত সময় কাটাচ্ছেন লামিন ইয়ামাল। সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোতে নেমে স্পেনের প্রাণভোমরায় রূপ নিয়েছেন তিনি। ফ্রান্সের বিপক্ষে করেছেন চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন ১৬ বছর বয়সী এই কিশোর।

স্বাভাবিকভাবেই তাকে নিয়ে আলদা পরিকল্পনা থাকার কথা সাউথগেটের। যে ভুলটা ফ্রান্স করেছে, সেটি নিশ্চয় করতে চাইবে না ইংল্যান্ড। ফ্রান্স এই উইঙ্গারকে খেলার অনেক জায়গা দিয়েছে। ইয়ামাল সেই সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। অর্থাৎ, বার্সেলোনা তারকাকে জায়গা দিলেই বিপদ বাড়তে পারে ইংলিশদের।

ইয়ামালকে আটকাতে ফাইনালেও কিয়েরন ট্রিপিয়ারকে একাদশে রাখতে পারেন সাউথগেট। এই ফুলব্যাক নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছেন। ইয়ামালের সঙ্গে স্পেনের অন্য খেলোয়াড়দের যোগাযোগ ব্যাহত করাই হবে মূল উদ্দেশ্য। এই কিশোরকে আটকাতে পারলে হয়তো স্পেনকেও ঠেকাতে পারবে ইংল্যান্ড।






সম্পর্কিত সংবাদ

  • লা লিগার দল সেল্টা ভিগোর অধিনায়ক যৌন হয়রানিতে দোষী সাব্যস্ত
  • ‘ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখার করার জন্য মুখিয়ে ছিলাম’
  • বিসিবি থেকে পদত্যাগ করলেন সুজন
  • এরচেয়ে খারাপ শুরু আর হয়নি সেলেসাওদের
  • বাংলাদেশের যে তিন ক্রিকেটার এবার ভারতের নজরে
  • এবার জিম আফ্রো টি-টেন টুর্নামেন্টে দল পেলেন বিজয়
  • ভারত বনাম বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ : শচীন তেন্ডুলকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ
  • দাবা অলিম্পিয়াডে দুই বোন ওয়ালিজা ও ওয়াদিফা