পাকিস্তানের সঙ্গে ‘স্বাভাবিক’, ভারতের সঙ্গে ‘জনকেন্দ্রিক’ সম্পর্ক চান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিউজ ডেস্ক :: বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে ‘স্বাভাবিক’, ভারতের সঙ্গে ‘জনকেন্দ্রিক’ সম্পর্ক চান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

‘টানাপোড়েন’ পেরিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘স্বাভাবিক সম্পর্ক’ চাওয়ার কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

আর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক যেন কেবল ‘সরকারের মধ্যে সোনালী অধ্যায়’ না হয়ে ‘জনগণ-কেন্দ্রিক’ হয়, সেদিকে নজর দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে হঠাৎ করেই তৈরি হয়েছে শীতলতা। আর একাত্তরে যে দেশের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবার বিষয়টি আলোচনায় আসছে।

সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, অনেক কারণে হয়ত পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে ‘একটু টানাপোড়েন’ ছিল। সেটা যদি এখন স্বাভাবিক সম্পর্কে উন্নীত হয়, তাতে সবার ‘খুশি হওয়া উচিত’।

“আমরাতো সবার সাথে বন্ধুত্ব চাই। পাকিস্তানের সাথে এখন শত্রুতা করেতো আমাদের কোনো ফায়দা নাই।”

উপদেষ্টা বলেন, “ভারতের সাথে সম্পর্কে যদি আপনারা মনে করেন যে, আসলে একটু টানাপড়েন চলছে, সেটা দ্বিপক্ষীয়ভাবে আমাদের চেষ্টা করতে হবে সমান্তরালে নিয়ে আসার। তবে একটা কথা যেটা আমরা সবসময় বলে আসছি, আমরা এখনো সেটা মনে করি, সেটা হলো যে, সম্পর্ক জনগণ-কেন্দ্রিক হতে হবে। এমন হতে হবে যে, যেটাতে মানুষও মনে করে যে সম্পর্কটা ভালো।”

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় দুদেশের সম্পর্ককে ‘সোনালী অধ্যায়’ হিসাবে বর্ণনা করে আসছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

সেই ‘সোনালী অধ্যায়’ থেকে পিছু হটার বিষয়ে এক প্রশ্নে সাবেক কূটনীতিক তৌহিদ হোসেন বলেন, “সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় বলছেন, সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় কিন্তু ছিল দুই সরকারের মাঝে। তখনও আমাদের লোকজন, স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসাবে আমি বলেছি যে, সহায়তাটা একেবারে সরকারের এবং দল বা ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।

“আমরা চাই, সুসম্পর্ক থাকুক জনসাধারণের পর্যায়ে। আমরা চাই যে, মানুষ এটাকে যুক্ত হোক। মানুষ মনে করুক যে, আসলে খুব ভালো সম্পর্ক। সেটা যে ছিল না, এটা স্বীকার করা ভালো। মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছিল, সেগুলো প্রশমন করা সম্ভব দ্বিপক্ষীয় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার মধ্য দিয়ে।”

ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটাতো বিচার করবেন আরও অনেক পরে। দেখবেন যে আমাদের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি-না। এই মুহূর্তেতো একটা পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, এখনই আপনি বিচার করতে পারবেন না, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি কি হচ্ছি না।”

তাৎক্ষণিক কোনো ক্ষতির বিষয় দেখছেন কি-না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ইমেডিয়েটলি আমিতো কোনো সমস্যা দেখছি না।”

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে যে ধরনের খবর হয়েছে, সেটাকে ‘মিথ্যার বেসাতি’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “বিপ্লব সাধিত হওয়ার পরে ক্যাওয়াস কিছু থাকেই, যে কোনো দেশেই। এখানে বিপ্লব হয়েছে, সেটা মেনে নিতে হবে।

“কিছু ক্যাওয়াস ছিল, সেখানে কিছু দুর্ঘটনাও ঘটে থাকতে পারে, কিন্তু সেটা নিয়ে ভারতীয় পত্রিকা যেভাবে লেগে পড়েছিল, সেটা কেউ, এমনকি বিশ্বমিডিয়ায় যারা বস্তুনিষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে, তারা কেউ কিন্তু ভারতীয় লাইনটাকে গ্রহণ করেনি।”

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা ফ্রি-ফ্র্যাংক থেকেছি সবসময় যে, হ্যাঁ, কিছু সমস্যা আছে, আমরা সেটা সমাধানের চেষ্টা করছি এবং সমাধান করেছি। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া একেবারে হাইপ সৃষ্টি করেছিল। আমার মনে হয়, আমরা সেই ধাপ পার করে এসছি।”

পাকিস্তানের সঙ্গে ‘সম্পর্কোন্নয়নের’ এ সময়ে বিমসটেক বাদ দিয়ে সার্ককে সক্রিয় করার আলোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ বলেন, “বিমসটেক আমরা ভেবেছিলাম সার্কের একটা বিকল্প হয়ে দাঁড়াবে। এটা কিন্তু দাঁড়ায় নাই। কারণ, মিয়ানমার যতক্ষণ শান্ত না হবে, ততক্ষণ বিমসটেক সত্যিকার অর্থে খুব ইফেকটিভ কিছু হতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “আমরা কিন্তু সার্কের বিকল্প হিসাবে চাই নাই বিমসটেক। সার্ক একটা সংস্থা, আমরা চাই যে এটা প্রাণবন্ত হোক। আমি আপনাদের এটুকু বলতে পারি, প্রধান উপদেষ্টা খুবই আগ্রহী সার্কের পুনর্জ্জীবনের ব্যাপারে। তো, আমরা দেখি, কতটুকু কি করা যায়।

“সার্ক আমরা জানি যে, এটা ভারত ও পাকিস্তানের বিরোধের ভিকটিম। আমরা চাই না যে, সেটা এই অবস্থায় থাকুক।”

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে চলা টানাপোড়েন পেছনে ফেলে এখন তাদের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া ‘খুব সহজেই’ হবে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের এক ধরনের টানাপড়েন চলছিল, এটা স্বীকার করে নেওয়া ভালো।

“এবং যেসব পয়েন্টে, যেসব ইস্যুতে টানাপড়েনটা চলছিল, সেগুলি কিন্তু এই সরকারের যে এজেন্ডা আছে, ছাত্র-জনতার যে এজেন্ডা এসেছে, তার সাথে কিন্তু সংহতিপূর্ণ। কাজেই, আমি এখানো কোনো বিরোধের সুযোগ আমি দেখি না।”

তিনি বলেন, “এমন কোনো ক্ষত সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়, যেটাকে মেরামত করতে পারব না। পরিবর্তন এসেছে, তারাও দেখতে পাচ্ছেন। তারা যেসব ইস্যুতে উদ্বিগ্ন ছিল, সেই ইস্যুতেতো আমাদের ছাত্ররাও উদ্বিগ্ন ছিল, আমাদের যুবকরা যারা রাস্তায় নেমেছে, তারাও উদ্বিগ্ন ছিল। কাজেই, আমরা মনে হয় এক ধরনের মিথষ্ক্রিয়া এখানে খুব সহজেই হবে।”






সম্পর্কিত সংবাদ

  • ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা
  • মহানবী (সা.) অন্ধকার দূরীভূত করে সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেন : তারেক রহমান
  • নার্সিংয়ের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর ওএসডি
  • ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার  : উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম
  • নার্সদের নিয়ে কটূক্তি : মহাপরিচালকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ
  • উপকূলীয় এলাকায় নৌযান চলাচল বন্ধ
  • দুই দিনের সফরে ঢাকায় ডোনাল্ড লু
  • বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ চায়