বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের নির্বাচন নিয়ে ছলচতুরি
নিউজ ডেস্ক :: দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকদের নিয়ে ২০১০ সালে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) গঠিত হয়। ১৯৯৪ সালের কোম্পানী আইনের ২৮ ধারার অধীনে পরিচালিত হচ্চে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এর কার্যনির্বহী কমিটির সভাপতি হিসেবে এম এ মুবিন খান এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন দায়িত্ব পালন করছেন।
সংঘ স্মারক ও সংঘ বিধি অনুযায়ি, প্রত্যেক প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের পক্ষে ২ জন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন। এসোসিয়েশনের মেমোরেন্ডাম এবং আর্টিকেলস্ অব এসোসিয়েশনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর সুষ্ঠ বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার্যনির্বাহী কমিটির উপর ন্যস্ত থাকবে। ১৯৬১ সনের বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশ ও ১৯৯৪ সনের বানিজ্যিক সংগঠন বিধিমালা অনুসারে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে। কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ হবে দুই বছর। কিন্তু বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-২ শাখায় কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২ এর ১৪ ধারা অনুযায়ি বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) এর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শর্তসাপেক্ষ ২ নভেম্বর ২০২৪ থেকে ১ ফেব্রয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত তিন মাস বৃদ্ধি করেন। উক্ত শর্তসমূহের মাঝে নির্বাচন বোর্ড গঠন এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা উল্লেখযোগ্য।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে বিপিএমসিএ এর নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা করা হয়েছে। তবে এই নির্বাচনী তফসিলে বেশ কিছু অসংগতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ বলে নির্বাচনী তফসিলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। নমিনেশন পেপার বিতরণ শুরুর আগে জমা দেবার শেষ তারিখ হতে পারে না।
এছাড়া নির্বাচন তফসিলে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০২৪ উল্লেখ থাকলেও বারবার যোগাযোগ করার পর এখনো পর্যন্ত নির্বাচনী বোর্ড চ‚ড়ান্ত ভোটার তালিকা সরবরাহ করতে পারেনি। উপরোক্ত গত ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে চ‚ড়ান্ত বৈধ প্রার্থী তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও আজও প্রকাশ করা হয়নি।
আগামী ১৫ জানুয়ারি ভোট গ্রহন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে ধু¤্রজাল সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) এর সদস্যদের মধ্যে। একইসাথে শেষপর্যন্ত সুস্থ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
এদিকে বিপিএমসিএ’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন আগামী ১০ জানুয়ারি ২০২৫ বার্ষিক সাধারণ সভা আহবান করেছেন, যার ৩ নং আলোচ্যসূচী ২০২৪-২০২৬ মেয়াদে ২ বছরের জন্য কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন। নির্বাচন তফসিলে ঘোষণা অনুযায়ি নির্বাচনের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৫। কিন্তু ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগেই ১০ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন কিভাবে সম্ভব? এটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্নের উদ্রেগসৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিপিএমসিএ এর সংঘ স্মারক ও সংঘ বিধি এর ধারা ২৬ অনুযায়ি নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন হবে। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত তিন টার্ম নির্বাচন না করে সিলেকশনের মাধ্যমে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২০২১ সালের ৯ জানুয়ারি রাজধানীর দ্যা ওয়েস্টিন হোটেলে সংগঠনের ১২তম সাধারণ সভার মাধ্যমে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। এতে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান সভাপতি এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের এমপি আনোয়ার হোসেন খান সাধারণ সম্পাদক মনোনিত হয়। এর আগেও ১০ তম সাধারণ সভার মাধ্যমে এম এ মুবিন খান সভাপতি ও ফ্যাসিস্ট সরকারের এমপি আনোয়ার হোসেন খান সাধারণ সম্পাদক মনোনিত হন। এছাড়া ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর ১৪তম সাধারণ সভার মাধ্যমে তারা টানা তিনবারের মতো সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনিত হন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের মতো এবারও নির্বাচন নিয়ে ছলচতুরি শুরু করেছে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর বর্তমান কার্যনির্বহী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিএমসিএ’র এক সদস্য জানান, নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে ছলচতুরি শুরু করেছে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি। এজন্যই নির্বাচনী তফসিলে ইচ্ছাকৃত ভাবেই অসংগতি সৃষ্টি করছে। নির্বাচন বাতিল করে সিলেকশনের মাধ্যমে বর্তমান সভাপতির পছন্দের কাউকে শীর্ষপদে বসাতে বিভিন্ন মহলে জোর তদবির চালাচ্ছেন। এজন্যই মূলত সাধারণ সভার মাধ্যমে কমিটি গঠনের চেষ্টা করছেন তারা।
বিপিএমসিএ’র নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোকাররম আলী সাথে নির্বাচন তফসিলের অসংগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিজেকে অসুস্থ দাবি করে কথা বলতে অক্ষমতা প্রকাশ করেন। এবিষয়ে বিপিএমসিএ’র অফিসে যোগাযোগ করতে বলে নিজের দায়ভার এড়িয়ে যান।
বিপিএমসিএ’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি
সম্পর্কিত সংবাদ
গর্ভবতী-সন্তানসহ নারীরাও গুমের শিকার হয়েছিলেন : গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন
নিউজ ডেস্ক :: তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে ভয়ংকর সব তথ্য পেয়েছে গুম সংক্রান্ত তদন্তবিস্তারিত…
ভোরের কাগজের প্রধান কার্যালয় বন্ধ ঘোষণা
নিউজ ডেস্ক :: ৩৩ বছরের পুরনো সংবাদ মাধ্যম দৈনিক ভোরের কাগজের প্রধান কার্যালয় বন্ধের ঘোষণাবিস্তারিত…